দেশের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নদীর বুকে দৃশ্যমান এই সেতুর সড়কপথ পূর্ণাঙ্গরূপ পেয়েছে। যা দেখে মানুষের আনন্দের শেষ নেই। তবে ভয়ের বিষয় চালুর আগেই বারবার পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটছে।
গত দুই মাসে ৬ বার নির্মাণাধীন এই সেতুর পিলারে ধাক্কা দিলো যানবাহন ভর্তি ফেরি। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর ২ ও ৩নং পিলারের মাঝখানে ১-বি স্প্যানে ধাক্কা লেগেছে।
ফেরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টের পিলারের পাইল ক্যাপ।
প্রতিবার ফেরির মাস্টারকে শাস্তির আওতায় আনা হলেও আসলে কি এর দায় শুধুমাত্র তাদের? এর পেছনে প্রাকৃতিক কারণ কতটুকু আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভুল কতটুকু? ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা এড়াতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
প্রশ্ন উঠেছে, তীব্র স্রোতের বিপরীতে ফেরি পরিচালনায় চালকদের দক্ষতা নিয়েও।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ফেরির ধাক্কা সত্ত্বেও সেতুর স্থাপনা নিয়ে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। এতে সেতুর ক্ষতির কোন সম্ভাবনাই নেই।’
তিনি বলেন, সেতু নির্মাণের আগেই এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা হয়েছে এবং চার হাজার টনের নৌযান এসে ধাক্কা দিলেও সেতুর কোন ক্ষতি হবে না।
ফেরির ধাক্কার ঘটনার পর মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে ঘাট সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শরীয়তপুরের জাজিরায়। তবুও প্রশ্ন উঠেছে, ফেরি চলাচলের জন্য বিকল্প রুট বেছে নিতে এত সময় লাগছে কেন।
পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, কয়েক দশকের পুরনো ফেরির দুর্বল ইঞ্জিনগুলোর গতি বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের চেয়ে কম বা কাছাকাছি। সেতুর পিলার নির্মাণে নদীতে পানি প্রবাহের পথ সংকুচিত হয়ে স্রোতের গতি আরও বেড়েছে। নদীর তলদেশ থেকে পানির উপরে থাকা পিলারের ক্যাপ বা ভিত ষড়ভূজ আকৃতির। এ আকৃতির কারণে সেগুলোকে কেটে স্রোত চলে যায়। ক্ষতি করতে পারে না। তবে এই আকৃতির কারণেই পিলারের দিকে পানির তোড় বেশি থাকে, ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। ফলে দুর্বল ইঞ্জিনের ফেরিগুলো স্রোতের টানে পিলারের দিকে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে। আবার চালকদেরও দক্ষতার অভাব রয়েছে।
১১জন ভারতীয় নাগরিক আটক
পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এলাকা থেকে গত দেড় বছরে বিভিন্ন সময়ে অন্তত এগারজন ভারতীয়কে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে নিয়মিত টহলরত সেনা সদস্যরা।
গত জুনে রূপসা রায় ও বিজয় কুমার রায় নামে দুজন ভারতীয় নাগরিককে সেতুর সংরক্ষিত এলাকা থেকে সেনা সদস্যরা আটক করে।
কিন্তু এসব ভারতীয়রা পদ্মা সেতু এলাকায় কেন এসেছিলো বা কি করছিলো সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।
জাজিরা থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেও তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের এখানে কারণ সম্পর্কে তথ্য এখনো পাইনি। তবে বিচার চলছে। তারা কারাগারে আছে।
জানা গেছে সর্বশেষ গত ২৫শে জুন জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে রূপসা রায় নামে এক ব্যক্তিকে আটকের পর জানা যায় তিনি গুজরাটের অধিবাসী। তার দুদিন আগে আটক হওয়া বিজয় কুমার রায়ের বাড়ি ভারতের বিহারে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও সেতু নির্মাণের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম একজন ভারতীয় আটক হয়েছিলো। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিহার থেকে আসা টুনা রায়, ওড়িশার বীরু মণ্ডল, বিহারের সোনু সিংসহ মোট এগার জনকে আটক করা হয়েছে।
এদের অনেকেই উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরার সময় সেনা সদস্যরা আটক করেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে।
তবে সেতুর প্রকল্প পরিচালক বলছেন এসব বিষয়ে নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই কারণ তারা মনে করে সেতু এলাকায় নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি নাগরিক আটকের বিষয়টি নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখছে। তবে এটি ঠিক যে আমাদের মূল চিন্তা হলো সেতু স্থাপনার নিরাপত্তা। সরকারের উচ্চপর্যায়েও বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে।’
কবে খুলছে পদ্মা সেতু?
পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানিয়েছে, পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যাবে।
অন্য সব আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে আগামী বছরের জুন নাগাদ সেতু খুলে দেয়ার চিন্তা আছে সরকারের।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ