ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান

প্রকাশনার সময়: ২১ জুন ২০২৩, ১৭:১১

বর্তমান সরকার প্রণীত শিশুশ্রম নিরসন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন আইনপ্রণেতা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, শিশুশ্রম নিরসনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজির অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে শিশুশ্রম নিরসন জরুরি। তাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এ বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।

বুধবার (২১ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে ইনসিডিন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত শিশুবান্ধব উপজেলার রূপরেখা প্রণয়নবিষয়ক সংলাপে এ আহ্বান জানান নেতারা।

শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সহ-সভাপতি আরমা দত্ত, সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জুলিয়া জেসমিন, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাফাতুর রহমান, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের আশরাফ উদ্দিন, এএসডি’র গুল-ই জান্নাত, আপন ফাউন্ডেশনের ড. সাইফুল আলম, ওয়ার্ড ভিশনের রেজাউল করিম, আহ্ছানিয়া মিশনের মো. মনিরুজ্জামান, নারী মৈত্রীর মোমিনুল হক, ইনসিডিনের মুবাশ্বিরা জামান সিন্থিয়া প্রমুখ।

মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন ইনসিডিনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম খান।

সংলাপে শিশুশ্রম বন্ধে শিশুদের ডাটাবেজ তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শিশুবান্ধব সরকার। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। ওই সকল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, এবং সিভিল সোসাইটিসহ সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। আগামী দিনে শিশুশ্রম মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, এসডিজির অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন এবং উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সব খাত থেকে শিশুশ্রম নিরসন অপরিহার্য। তাই নিম্ন দরিদ্র মানুষদের সচেতন করতে হবে। কারণ এসব পরিবারে সন্তানদের সংখ্যা না কমালে কখনো শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না। তাই দুটি সন্তানের বেশি নয়- নিম্ন দরিদ্রদের মধ্যে এই ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, শিশু অধিদপ্তরসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, সরকার দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা শিশুদের শিক্ষা, নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ১৪ বছরের নিচের আর কোনো শিশু যাতে নতুন করে শিশুশ্রমে নিযুক্ত না হয় সেজন্য পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। পরিদর্শকালে বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুকে সরিয়ে আনা হয়েছে। শিশুদের জন্য নিরাপত্তা, খাদ্য ও পুষ্টি, আশ্রয় ও সুরক্ষা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক বিষয় সম্পর্কিত নানাবিধ কর্মসূচিসহ শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় টেকসই উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে মো. মাহবুবুল হক বলেন, আগামী দিনে শিশুশ্রম বন্ধের কার্যক্রম সারাদেশে বিস্তৃত করতে হবে। শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাজেটে বরাদ্দ রাখা ও তা বাস্তবায়নে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সরকারের উন্নয়ন অংশীদার ও সহযোগী হিসেবে এনজিওদের পাশে রাখার আহবান জানান তিনি।

সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা বিভিন্ন মতামত ও প্রস্তাবণা তুলে ধরেন। তারা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে শিশুবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হলে জেলা-উপজেলা জন্য পৃথক বরাদ্দ ও রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। শিশুশ্রম মুক্ত যেসব জেলা-উপজেলা হবে সেসব জেলার জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এতে অন্য জেলাগুলোর ডিসিরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসবে। মাধ্যমিক স্কুলে ড্রেস ও ভর্তি ফ্রি কারণে বেশিরভাগ শিশু ড্রাপআউট হয়ে যায়। বিভাগ-জেলা-উপজেলার শিশুদের ডাটাবেইজ তৈরি, মনিটরিং ব্যবস্থা ও প্রয়োজনে সার্ভে মাধ্যমে প্রকৃত শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে বাজেটে শিশুদের জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখতে হবে। শিশুদের পরিবার পুর্নবাসনের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ সকল বিষয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সকল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরও উদ্যোগী হতে হবে।

নয়া শতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ