রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজে টিউশন ফি বকেয়া থাকায় এক শিক্ষার্থীকে অপমান করায় ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিউশন ফি বকেয়া থাকা অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে অপমান করে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর ওই শিক্ষার্থী হোস্টেলে গেলে হোস্টেল সুপারও তাকে সবার সামনে অপমান করেন।
শিক্ষকদের এমন আচরণ সহ্য করতে না পেরে ওই শিক্ষার্থী অভিমানে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বর্তমানে ওই ছাত্রী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি রয়েছেন।
চিকিৎসকরা তার শারীরিক উন্নতির বিষয়ে কোনো আশা দিতে পারছেন না। ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজে নার্সিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম সূচনা মন্ডল মুক্তা। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নেছাড়াবাদ উপজেলায়। এ ঘটনায় ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা ও হল সুপারের নাম উল্লেখ করে তেজগাঁও থানায় অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীর বাবা সন্তোষ মন্ডল।
লিখিত অভিযোগ সন্তোষ মন্ডল বলেন, ‘তার বড় মেয়ে সূচনা মন্ডল ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের হোস্টেলেই থাকত।
গত ২৭ মে তার মেয়ের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু টিউশন ফির প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো বাকি ছিল। টাকা খুব দ্রুত জমা দিয়ে দেয়া হবে, এ কথা বলে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি চাইলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি এবং কোনো এডমিট কার্ড দেয়নি। বরং অনুরোধ করতে গেলে ক্যাশিয়ার এবং প্রিন্সিপাল তাকে অকথ্য ভাষায় অপমান করেন।
এরপরও ক্ষীণ আশা নিয়ে ২৭ তারিখ পরীক্ষার হলে গেলে দায়িত্বরত পরীক্ষক তাকে সবার সামনে অপমান করে রুম থেকে বের করে দেন। শুধু তাতেই ক্ষান্ত হয়নি— ওইদিন রাতে হোস্টেলে তার মেয়েকে সবার সামনে হোস্টেল সুপার রীতা হালদার অপমান করেন। বারবার অপমান সহ্য করতে না পেরে ওইদিন রাতে সূচনা ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
এরপর তার সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেলে পরদিন সকালে তাকে দ্রুত ওই হাসপাতালেই নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। এরপর খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। গত ২৭ মে থেকে ১৫ দিন তার (আমার) মেয়ে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন আছে। যেকোনো সময় মেয়ের যেকোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।’ জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা সন্তোষ মন্ডল নয়া শতাব্দীকে বলেন, আমি ২৮ মে হাসপাতালে এসে দেখি মেয়ে লাইফ সাপোর্টে আছে। পরবর্তীতে ডাক্তারের সঙ্গে আমার কথা হয়। আমি ডাক্তারকে বলি, স্যার এখানে তো অনেক খরচ। আমি মেয়েকে অন্য কোনো সরকারি মেডিকেলে নিয়ে যাব। তখন ডাক্তার বলেছিলেন- মেয়ের অবস্থা অনেক খারাপ।
এখন নিয়ে গেলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। হাসপাতালের বিলের জন্য চিন্তা করা লাগবে না, আগে মেয়ে সুস্থ হোক, টাকার বিষয় আমরা পরে দেখব। কারণ সূচনা আমাদের কলেজেরই ছাত্রী। কিন্তু এখন তারা সুর বদলে ফেলেছে। হাসপাতালে প্রায় ৬ লাখ টাকা বিল করেছে।
এখন আমাকে বলছে যে, আমি যেন হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোথাও কোন অভিযোগ না করি। তাহলে আমার বিল কমিয়ে রাখবে এবং মেয়ের ট্রিটমেন্ট হবে। আর আমি যদি কোথাও অভিযোগ করি তাহলে তারা কোনো ধরনের সাহায্য করবে না।
ভুক্তভোগীর বাবা আরও বলেন, আমি তেজগাঁও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। থানা থেকে পুলিশ এসেছিল জবানবন্দি নেয়ার জন্য, সেটিও তারা দিতে দেয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জায়গায় বলছে ফ্যামিলির সমস্যার কারণে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। এমন কি আমার মেয়ে একটি মুসলিম ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এমন করেছে তথ্য ছড়াচ্ছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।
আমার সঙ্গে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেনি। এত টাকা যে বিল করেছে, সেই টাকা আমি কোত্থেকে দিব তাও জানি না। তিনি বলেন, সাত আট মাস ধরেই আমি অসুস্থ। এজন্য আমার চাকরি চলে যায়। তখন বেশ কিছু টাকা ঋণ হওয়ায় আমি একটু আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। কিন্তু এরপরও আমি টিউশন ফির টাকা দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সেই টাকা দেয়ার আগেই আমার মেয়ের এ করুণ পরিণতি!
তিনি আরও বলেন, আমাকে এখন হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। কাউকে কিছু বললে বা কোনো অভিযোগ দিলে আমার মেয়ের চিকিৎসা না করার হুমকি দিচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে হোস্টেল সুপার রীতা হালদার বলেন, আমার নামে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কলেজের বিল নেবে কলেজ কর্তৃপক্ষ- আমি কেন ওই মেয়েকে বকাঝকা করব। ওর সঙ্গে বকেয়া নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের যদি কোনো ঝামেলা হয়, তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার। আমার হোস্টেলে তো তার সঙ্গে কিছু হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এই ছাত্রী গত এক মাস হলে ছিল না। পরীক্ষার আগের দিন হলে এসেছে। আসার পরে আমার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তার এ ঘটনায় আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আর এতগুলো ওষুধ সে কোথায় পেল— সেটাও একটা প্রশ্ন। আমরা তার রুম থেকে শুধু ওষুধের খোসা উদ্ধার করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যতটুকু শুনেছি টাকা-পয়সা নিয়ে পারিবারিক ঝামেলা চলছে। মেয়ে নাকি টাকা চেয়েছিল আর তারা বাবা টাকা দেয় নাই- এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা ছিল।
থানায় অভিযোগের বিষয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান বলেন, দুই পক্ষেরই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আছে। এক পক্ষ বলছে তারা টাকা পাবে টাকা দিচ্ছে না। আর এক পক্ষ বলছে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। আমরা বিষয়টা নিয়ে কাজ করছি।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ