ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কূটনীতিক নিরাপত্তায় এজিবি

প্রকাশনার সময়: ২৩ মে ২০২৩, ০৮:২৮ | আপডেট: ২৩ মে ২০২৩, ০৮:২৯

কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় প্রস্তুত হচ্ছে আনসারের প্রটেকশন গার্ড ব্যাটালিয়ন। বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল দিয়েই সাজানো হবে এ নিরাপত্তা ব্যাটালিয়ন। রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, মন্ত্রী, এমপি ও ভিভিআইপিদের প্রটোকলে আনসারের এই বিশেষায়িত ইউনিট কাজ করবে বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, ব্যাটালিয়নে ৪১৬ সৈনিক এবং কর্মকর্তাসহ প্রশিক্ষিত তিন হাজার জনবল রয়েছে। যাদের অন্যান্য ব্যাটালিয়নে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। সরকারের নির্দেশে বিশেষ ব্যাটালিয়ন গঠনের উদ্যোগ নিলে তাদের থেকে লোকবল নিয়োজিত করা যাবে।

কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানান, ফোর্স স্বল্পতার কারণে আপাতত তাদের বাড়তি প্রটোকল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে তারা আনসার থেকে বিশেষায়িত ফোর্স ভাড়া করতে পারবেন। এমন অবস্থায় সেই ‘বাড়তি নিরাপত্তা’ দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষায়িত ‘আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন’ বা এজিবি।

গত ১৭ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কূটনীতিকদের আনসার বাহিনী কীভাবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা (এসকর্ট) দেবে, সেটি চূড়ান্ত হয়েছে।

নোট ভার্বালের (কূটনৈতিক পত্র) মাধ্যমে দূতাবাসগুলোকে বিষয়টি জানান হয়েছে। বৈঠক শেষে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক বলেন, কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতে আনসার বাহিনী প্রস্তুত।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, এজিবির সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে গার্ড ব্যাটালিয়নের। এছাড়া এজিবির সদস্যরা দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা ভারী অস্ত্র পরিচালনা করতেও সক্ষম।

বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, আনসার বাহিনীতে বর্তমানে ৪২টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নারী ব্যাটালিয়ন ও একটি গার্ড ব্যাটালিয়ন। ওই ব্যাটালিয়নটির নাম এজিবি। এজিবি মূলত ডিবির সোয়াত টিমের মতো বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। চট্টগ্রামে ১৬টি ব্যাটালিয়নের ৬ হাজার ২৪৪ সদস্য এককভাবে ৬০টি ক্যাম্প ও অন্য বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬টি ক্যাম্পে দুর্গম এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ‘অপারেশন উত্তরণ’-এ কাজ করছে।

সেখানে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের দমন ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পরিবার-পরিজন রেখে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। গহীন জঙ্গলে নিয়মিত শর্ট রেঞ্জ পেট্রোলিং (এসআরপি) ও লং রেঞ্জ পেট্রোলিং (এলআরপি) টহল প্রদান ছাড়াও আভিযানিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।

এছাড়া বর্তমানে আইসিডিডিআর,বিতে এই ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে এজিবি। এই ব্যাটালিয়নে ৪১৬ জন সৈনিক এবং কর্মকর্তাসহ প্রশিক্ষিত প্রায় তিন হাজার জনবল রয়েছে। যাদের অন্য ব্যাটালিয়নে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের (এজিবি) সদস্যরা দেশে-বিদেশে কুইক রেসপন্স ট্রেনিং (কিউআরটি), স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (এসটিটি) ও স্পেশাল প্রটেকশন ট্রেনিং, বিশেষ অস্ত্র এবং ট্যাকটিক্যাল ট্রেনিং নিয়েছেন।

আনসারের কর্মকর্তারা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) ও র‍্যাবে প্রেষণে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা সচিবালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা অধিদফতর (ডিজিএফআই) ও র‍্যাবসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরে প্রেষণে কর্মরত থেকে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।

পার্বত্যাঞ্চলের পাশাপাশি জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে মোবাইল কোর্ট ও ভেজালবিরোধী অভিযানে কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদবির ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। সারা দেশের সমতল এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মৌলবাদ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। তাদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও উন্নতি অর্জন করে যাচ্ছে।

জাহিদুল ইসলাম আরও জানান, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ এবং জনসম্পৃক্ত বাহিনী। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আনসার-ভিডিপির সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রায় পাঁচ লাখ সদস্য ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে এ বাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হন।

সূত্র মতে, দেশে যে কোনো জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় এই বাহিনীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ, বঙ্গবাজার এবং নিউসুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম ও আহতদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা প্রদান, শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে দর্শনার্থীদের ভিড় এড়াতে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের (এজিবি) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া বাহিনীর বিভিন্ন পদবির ব্যাটালিয়ন আনসার ও সাধারণ সদস্যরা নিয়মিত পদ্মা সেতুতে এবং পদ্মায় টহলের মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে জাতীয় সংসদ ভবন, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, হাসপাতাল, হোটেল, মোটেল ও ইপিজেডসহ পাঁচ হাজারেরও অধিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসার এবং অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক (অপারেশন্স) এ কে এম জিয়াউল আলম বলেন, আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও স্মার্ট ব্যাটালিয়ন। ছয় বছরের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। ভিআইপিদের নিরাপত্তাসহ দেশের সম্পদ রক্ষার্থে এজিবিকে সে ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে আমরা এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি, তবে আমাদের ব্যাটালিয়ন প্রস্তুত রয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ