প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে মেয়ররা জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না বলে মনে করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। শনিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে করণীয়’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতা আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। প্রতিযোগিতায় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে সরকারি বাঙলা কলেজ চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস, সাংবাদিক ফাল্গুনী রশীদ, সাংবাদিক জিনিয়া কবির সূচনা ও সাংবাদিক রিশাদ হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাজীপুর সিটি মেয়র বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে সিটি করপোরেশন এলাকায় জনপ্রতিনিধিগণ সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের সহযোগিতায় নিরলসভাবে কাজ করছে। তবে এসব কাজ সফল করতে জনগণের সম্পৃক্ততা জরুরি। অনেক সময় জনপ্রতিনিধিদের দুর্বলতার কারণে আমলাদের প্রাধান্য দৃশ্যমান হয়। বাসা বাড়ি ও ব্যক্তিগত স্থাপনা থেকে যাতে মশা প্রজনন না হয় নাগরিকদেরকে সেদিকে যত্নবান হতে হবে। একইসাথে খালি জায়গা ও সরকারি ভবনেও যেন মশার বিস্তার না ঘটে সেদিকে রাজউক, ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিশেষভাবে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মশক নিধনের জন্য বিদেশ থেকে ওষুধ কেনা হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে মেয়ররা জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তাই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দকরণ, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সবার সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধসহ বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলা সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নগরবাসীর অসচেতনতা, কার্যকর ওষুধ না ছিটানো, সমন্বিত কীট ব্যবস্থাপনা না থাকা, ঢাকার নগর পিতাদ্বয়ের সমন্বয়হীনতা, বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম না থাকা, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ।
অনুষ্ঠানে ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আট দফা সুপারিশ প্রদান করেন-
১। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক কমিটি গঠন করা এবং জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করা।
২। মশার সমস্যা দূর করতে শুধু মৌসুমি কার্যক্রম পরিচালনা না করে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে বছরব্যাপী কার্যকর ওষুধ ছিটানো ও সমন্বিত কীট ব্যবস্থাপনা করা।
৩। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মশক নিধনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এবং প্রকৃত ব্যয় চিত্র জনগণকে অবহিত করা।
৪। গরিব মানুষসহ যাদের প্রয়োজন তাদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি মশার কামড় থেকে রক্ষায় বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করা। অসচ্ছল পরিবারের যেসকল মানুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছে তাদের জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
৫। বাসাবাড়ি ও ব্যক্তিগত স্থাপনায় মশক প্রজনন রোধে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৬। এডিস মশাসহ মশা নিধনে আমদানিকৃত কীটনাশক স্বল্প মূল্যে বা বিনামূল্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নাগরিকদের প্রদান করা।
৭। করোনামুক্ত রাখতে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ইউনিটে রেখে সেখানে তাদের চিকিৎসা করা।
৮। ডেঙ্গু প্রতিরোধে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে সারাদেশে প্রদর্শন করা ও তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটি রেডিওতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ