ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্মস্থলেই তাদের ইফতার

প্রকাশনার সময়: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৩

সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ইফতারের প্রস্তুতি। সারা দিন সিয়াম সাধনার পর জীবিকার তাগিদে অনেকেরই পরিবার পরিজন ছেড়ে ইফতার করতে হয়। কর্তব্যের পাশাপাশি রাস্তা অথবা কর্মস্থলেই তাদের ইফতার সারতে হয়।

ইফতারের সময় দায়িত্বের কারণে পুলিশ, ব্যাংক, বীমা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আবাসিক ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীসহ অনেক কর্মচারীকেই বাসা ছেড়ে ইফতার করতে হয় রাস্তায় অথবা কর্মস্থলে। যদিও এদের মধ্যে আবার কারও কারও অফিস পূর্বের সময়সূচি থেকে একটু আগেভাগে ছুটি হলেও তাদের অনেককেই অসহনীয় যানজটের কবলে পড়ে রাস্তায় চলমান অবস্থাতেই ইফতার সারতে হয়। কাজের ব্যস্ততায় পরিবহন শ্রমিকরা প্রায়ই কোনোরকমে বাস টার্মিনালে ইফতার করেন। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ আর পরিবহন শ্রমিকদেরও ইফতার ভাগ্য রাস্তাতেই বন্দি।

বুধবার ২০ রমজান। ইফতারের সময় বাকি আর মাত্র ১৮ মিনিট। পান্থপথ থেকে সোনারগাঁওমুখী রাস্তায় তখনো ঘরমুখো মানুষের চাপ। এরই মধ্যে তেজগাঁও জোনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ইফতার এসে পৌঁছেছে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে। ইফতারে আছে একটি করে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, কলা, জিলাপি, কিছু ছোলা ও মুড়ি। খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে গেছে। সঙ্গে আছে এক বোতল পানি। আজানের আগ মুহূর্তে ব্যস্ত পুলিশ সদস্যরা।

আজানের ধ্বনিতে মুখরিত হলো চারপাশ। রাস্তায় যেসব গাড়ি চলছিল সব যেন থেমে গেল। যেন এক মহাশূন্যতা বিরাজ করছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের কয়েকজন আগেই মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, জিলাপি প্লাসটিকের একটি বড় পাত্রে একত্র করে মিশিয়ে ফেলেছে। আজানের পর সব পুলিশ সদস্য পুলিশ বক্সে এসে ইফতারে যোগ দেন।

কথা হয় কারওয়ান বাজার মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সঙ্গে। তিনি জানান, বিকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। এতে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। অনেক সময় কিছু যানবাহন উল্টো পথে এসে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উল্টো পথে আসা যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাসায় ইফতার করার ইচ্ছা থাকলেও কর্তব্য পালনে আমাদের রাস্তায় বা মাঝে মাঝে ট্রাফিক বক্সে ইফতার করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কনস্টেবল আক্ষেপ প্রকাশ করে বললেন, সন্তানদের ছাড়া এভাবে ইফতার করার কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। রাস্তায় ইফতার করতে কষ্ট লাগে, কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই। কর্তব্য পালনে রাস্তায় ইফতার করা এটা অন্যরকম জীবন। তিনি আরও বলেন, যানজট বেড়ে গেলে প্রায় সময় একহাতে ইফতার খাই, আরেক হাত দিয়ে বাঁশি বাজাই।

১২ বছর ধরে এ পেশায় আছেন কনস্টেবল ইউনুস মল্লিক। ইফতার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইফতারের প্যাকেট হাতে ধরে বললেন, প্রতিবছর আমাদের এভাবেই ইফতার করতে হয়। রাস্তায় কাজ করি সে কারণে রাস্তায়ই ইফতার করতে হয়। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। তিনি আরও জানান, পরিবার পরিজনের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ আমরা পাই না। সন্তানদের বছরের পর বছর সান্ত্বনা দিয়ে চলছি।

এছাড়া একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথ নিরাপত্তা রক্ষী ইমামুল হক বললেন, সবাই চায় তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ইফতার করতে। আমাদের কর্তব্যের খাতিরে কর্মস্থলে থেকেই ইফতার করতে হয়। এতেই শান্তি পাই আমরা।

জানা গেছে, দেশের সেবায় নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি এসব কর্মজীবী মানুষ শুধু পরিবারের লোকজন ছেড়েই নয়, কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ভালো পরিবেশে ইফতারের সুযোগও মেলে না তাদের। তাই বাধ্য হয়ে কর্মস্থল কিংবা রাস্তার পাশেই কোনো জায়গাতে তাদের ইফতার করতে হয়। রাজধানীতে চলাচলকারী রাইদা পরিবহন কর্মচারী হেমায়েত বলেন, যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত থাকি। তাই পরিবার ছেড়ে পরিবহন কর্মচারীদের সঙ্গে ইফতার করা হয়।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ