থেমে নেই অগ্নিকাণ্ড ও গ্যাস বিস্ফোরণে প্রাণহানি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতি বছরই ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। এসব ঘটনায় অকালেই হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। আহত হয়ে অনেকেই সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হচ্ছেন। কর্মক্ষমতা হারিয়ে পরিবারের বোঝা হয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন আহতরা।
তবু এসব অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি ও মামলা হয়- তবে শাস্তি হয় না। অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং বিল্ডিং কোড না মেনে ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে গ্যাস বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও ভবন মালিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
এছাড়া যাদের হাতে পর্যবেক্ষণ করা ও ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তারাও সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। এমন অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম অব্যাহত থাকলে এবং আইন প্রয়োগে কঠোর না হলে পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরো ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। ফায়ার সার্ভিসের
তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রায় সবই দায়িত্ব পালনে অবহেলাজনিত কারণে।
সারাদেশে ২০০৬ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত গত ১৫ বছর ৫ মাসে অগ্নিকাণ্ড ও গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় ১০ হাজার ৫৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ছোট-বড় ১ লাখ ৬৮ হাজার ২০৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৯ লাখ ২৩০ জন। আহতদের অনেকেই শরীরের দগ্ধ ক্ষত নিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, কারখানার মালিকপক্ষের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেখার ক্ষেত্রে যাদের দায়িত্ব ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা এবং ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট’ দেয়ার প্রয়োজন। আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরো বলেন, কারখানায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর জনবল ও অবকাঠামো সংকট যেমন রয়েছে, তেমনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য ‘সিস্টেম ফেইলিওর’ই দায়ী। আমাদের ভালো ভালো আইন আছে তবে নেই তার সঠিক বাস্তবায়ন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বাণিজ্যিক ভবন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান শপিংমল ও আবাসিক বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ও গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এর কারণ বিল্ডিং কোড না মেনে নকশাবহির্ভূত অবৈধ এবং ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণ এবং অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ। এ সব ঘটনায় প্রতি বছর হতাহত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। তারপরেও থেমে নেই নকশাবহির্ভূত অবৈধ বহুতল ভবন নির্মাণ। চলছে অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ। আছে সংযোগ লাইনের ত্রুটি ও লাইনের লিকেজ। রাজউক, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার অবহেলা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই আইনের তোয়াক্কা না করে সারাদেশে গড়ে তোলা হচ্ছে হাজার হাজার বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
একটি কারখানা নির্মাণ করতে রাজউক, স্থানীয় পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন, ফায়ার সার্ভিস, কারখানা অধিদফতর ও অন্যান্য অনুমতি নিতে হয়। কারখানায় অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করলে বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমতিও নিতে হয়। কারখানার কার্যক্রম চলাবস্থায় প্রতিবছর বা দুই-তিন বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদের জীবনমান ও নিরাপত্তা ইস্যুতে নিয়মিত পরিদর্শনও করতে হয় এসব প্রতিষ্ঠানকে। তবে দায়িত্ব থাকলেও কোনো ডিপার্টমেন্টই কারখানার নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মৃত্যু, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে বিশ্বকে নাড়া দেয়া দুর্ঘটনায় ১১৩৬ জনের মৃত্যু, ২০১৬ সালে গাজীপুরের টাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এবং পুরান ঢাকার নিমতলায় কেমিক্যাল গুদামের আগুনে শতাধিক মৃত্যুর পর সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব অবহেলা উঠে এসেছে।
অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) শাকিল নেওয়াজ বলেন, একটি কারখানা নির্মাণ করতে রাজউক, স্থানীয় পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিতে হয়। ভবনের কোনো স্থান থেকে ২৩ মিটারের মধ্যে সিঁড়ি থাকার নিয়ম রয়েছে। ভবনে কমপক্ষে চারটি এক্সিট পয়েন্ট (সিঁড়ি) থাকা প্রয়োজন। অথচ কোনোটিতে রয়েছে মাত্র দুটি বা একটি এক্সিট পয়েন্ট। থাকে না অগ্নিনির্বাপণের কোনো নিজস্ব ব্যবস্থা। তিনি বলেন, যে স্থপতি ভবনের ডিজাইন করেন, যিনি ডিজাইন পাস করেন, এই ডিজাইনের ওপর যিনি লাইসেন্স দেন, ডিজাইনের ওপর যে প্রতিষ্ঠান ইন্স্যুরেন্সের টাকা দেয়, এই ফালতু পরিকল্পনার ওপর যেসব ব্যাংক কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় তারা সবাই এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এমন ত্রুটিপূর্ণ ভবনে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স কীভাবে সিটি করপোরেশন দেয়, ডিসি কীভাবে অনুমোদন দেন তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এখন সময়ের দাবি। ফ্যাক্টরি মালিকদের সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, শ্রম মন্ত্রণালয় চোখ বন্ধ করে থাকে কেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি এবং দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে সারা বছরই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সংযুক্তি এবং অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগুনের ঘটনা এভাবে বাড়ার পরও জনসচেতনতা বাড়েনি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, যেমন ফায়ার সার্ভিস, রাজউক, সিটি করপোরেশন আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবনসহ কল-কারখানাগুলোতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিতে সঠিক নজরদারি করতে পারছে না বা করছে না। আর এ কারণে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েই চলছে। দেশের বহুতল ভবন ও কল-কারখানাসহ বাণিজ্যিক ভবনগুলোর প্রায় ৯০ ভাগেই অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বেশিরভাগ ভবন পুরনো, তাই এখন সেগুলোতে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সংযোজন করাও কঠিন। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলেও আগুনের ঘটনা বাড়ছে।
কলকারখানা অধিদফতরের তথ্যমতে, করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩ হাজার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে তারা। এর আগের বছর ২৬ হাজার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। তবে গত দেড় বছরে তা সীমিত করা হয়। খুব সংক্ষিপ্ত পরিদর্শনে শ্রমিকদের জীবনমান সংক্রান্ত কয়েকটি প্রশ্নতেই শেষ হয় কার্যক্রম। ২০০৬ সালের শ্রম আইনানুযায়ী আরএমজিসহ যেকোনো কারখানা, প্রতিষ্ঠান ও দোকান শ্রমিকদের আইনগত অধিকার, সুবিধা, কর্মস্থলের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা তদারকি করার দায়িত্ব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের। গত দেড় বছরে বিশেষ পরিদর্শন চলছে। স্বাভাবিক সময়ের পরিদর্শনে ১০০টি প্রশ্ন ছিল। সেখানে চাকরির শর্তাবলি, কিশোর শ্রমিক, মাতৃত্ব কল্যাণ, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যবিধি, মজুরি, কর্মঘণ্টাসহ শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা ও বিধি ছিল। তার পরিবর্তে কোভিডকালে ১৬টি প্রশ্নে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, তা তদারকি করতে বিশেষ পরিদর্শন চলছে। এসব প্রশ্নের মধ্যে কারখানার অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়গুলো নেই।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম বলেন, কারখানা পরিদর্শন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের রুটিন ওয়ার্ক। সেই রুটিন ওয়ার্ক কি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমাদের পর্যাপ্তসংখ্যক পরিদর্শক নেই।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন, এনডিসি বলেন, ফায়ার সার্ভিসে বর্তমানে ১১ হাজার জনবল রয়েছে। দেশের সব উপজেলায় কার্যক্রম চালাতে হয়। দেশের ১৮ কোটি মানুষ ও ৯০ লাখ প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এটি অপ্রতুল বলা যায়। বর্তমানে ১৫৬টি প্রকল্পের অধীনে জনবল ও অবকাঠামো বৃদ্ধির কাজ হচ্ছে। ২৫ হাজার জনবল নিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। ইউএনডিপি আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। এ বিভাগ ভালোভাবেই কাজ করছে।
আইনের প্রয়োগ না থাকায় বাড়ছে ঝুঁকি : কারখানা কিংবা বহুতল ভবন নির্মাণসংক্রান্ত বেশ কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু এসব আইনের বাস্তবায়ন নেই। নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি এবং পরিবেশবিদরা বলছেন, দেশে আইন আছে প্রতিটি কারখানায় পর্যাপ্ত দরজা ও প্রশস্ত সিঁড়ি থাকতে হবে। বিল্ডিংয়ের ওপরের তলাগুলো থেকে দ্রুত বের হওয়ার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ঝুলন্ত সিঁড়ি (ফায়ার এক্সিট) থাকতে হবে। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণের যন্ত্রপাতিসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে বেশিরভাগ গার্মেন্টস মালিক এসব আইন-কানুন মানেন না। যারা মানছেন, তারা পুরোপুরি মানেন না। এক্ষেত্রে অবহেলার কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দায়-দায়িত্বও তাদের ওপর বর্তায় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজউকের বহুতল ভবনের সংখ্যা আর তার বিপরীতে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রের হিসাব থেকে দেখা যায়, ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার ভবন ছাড়পত্রহীন। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক ও শিল্প ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় স্মোক ডিটেক্টর, ফায়ার ডিটেক্টর, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং অগ্নিনির্বাপক হোস পাইপ আর জলাধারসহ যেসব বিধিবিধান মানার কথা সেটা যেমন হয় না তেমনি বছরে দুবার এসব পরিদর্শনের বাধ্যবাধকতাও সরকারি সংস্থা যথাযথভাবে করছেন না বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
দুর্ঘটনা রোধে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ : সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে নিয়মিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে এসব কারখানায় সব সময়ই দেখা যায়, আগুন লাগলে ভবন থেকে বের হওয়ার পর্যাপ্ত সিঁড়ি, দরজা এবং ঝুলন্ত সিঁড়ি (ফায়ার এক্সিট) থাকে না। ফলে বের হতে না পেরে আগুনে পুড়ে, পদদলিত হয়ে অথবা উঁচু ভবন থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লাফ দিয়ে অকালে প্রাণ হারান শ্রমিকরা। অগ্নিকাণ্ডে মোকাবিলায় দ্রুত পানি সরবরাহের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পাম্পযুক্ত পানিকল) স্থাপন করা জরুরি। ফায়ার হাইড্রেন্ট হচ্ছে পানির একটি সংযোগ উৎস, যা পানির প্রধান উৎসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এই উৎস থেকে পানি ব্যবহার করা যায়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, লম্বা পাইপের সাহায্যে ইচ্ছেমতো যে কোনো দূরত্বে পানি সরবরাহ করা যায়। এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকার যেসব রাস্তায় অগ্নিনির্বাপক গাড়ি সহজে প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে এই ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ বেশ কার্যকর। এছাড়া প্রতিটি রেজিস্ট্রার্ড কোম্পানির দফতরকে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বাঙ্গীন ভবন বিমা (কমপ্রিহেন্সিভ বিল্ডিং ইন্স্যুরেন্স) নিতে বাধ্য করার প্রতিও জোর দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, বড় ব্যাংক-ঋণের জন্যও এই বিমা বাধ্যতামূলক করা জরুরি। এ বিমার পলিসির শর্ত হিসাবে প্রয়োজনীয় ইমারত সুযোগ-সুবিধা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিধি সংযুক্ত করা এবং বিমা কোম্পানিগুলো নিজ স্বার্থেই এসব ভবন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিদর্শন ও সংরক্ষণের জন্য চাপ দেবে। ভবনের সামনেই ভবনটি কোনো বিমা কোম্পানি কর্তৃক বিমাকৃত ও ভবনের নিরাপত্তা পরিদর্শন-সংক্রান্ত তথ্য প্রদর্শন করতে হবে।
বিমা কোম্পানিগুলো নিয়মিত তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদন জয়েন্ট-স্টক রেজিস্ট্রার ও সিকিউরিটিজ-এক্সচেঞ্জ কমিশনে দেবে। এই সংক্রান্ত ‘জোচ্চুরি’ ঠেকানোর জন্য অবশ্যই বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেহেতু আগুন লাগলে বিমা কোম্পানির ক্ষতি হবে, কাজেই তারা তৎপর থাকবে যাতে ভবন মালিকরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন। আবার অগ্নিনির্বাপণ ঝুঁকির ওপর যেহেতু বিমার চাঁদার পরিমাণ নির্ভর করবে, সেহেতু ভবন মালিকরাও চাইবেন ঝুঁকি কমাতে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ