করোনা মহামারির মধ্যে রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিনই আড়াইশ’র বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। তবে আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তারা। তারপরও নেই কাঙ্ক্ষিত সচেতনতা। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে নেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার সচেতনতা।
চলতি বছরের শুরু থেকেই শঙ্কা ছিল বাড়বে ডেঙ্গু। ঘটছেও তাই। বিশেষ করে হাসপাতালের বিছানায় শিশুরাই বেশি। তবু টনক নড়ছে না। দুই সিটি করপোরেশনে অভিযানে ঢুঁ মারলেই দেখা মেলে এডিস মশার লার্ভার।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। এ নিয়ে এই বছরে ডেঙ্গু নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এর মধ্যে জুলাই মাসে ১২ জন ও আগস্টে ২৩ জন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে আরো ২৭৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরে নতুন ২১ জন রোগী।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের এ হিসাব শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগের দিন শুক্রবার ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২২১ জন, মৃত্যু হয়েছিল দুইজনের। দেশে গত ২ দিনে ভর্তি হয়েছে ৪৯৯ জন, মারা গেছেন চারজন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে, চলতি মাসের ২১ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৯২ জন। গড়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৪২ জনের বেশি। এর আগে গত জুলাই মাসেই ভর্তি হয়েছিল ২ হাজার ২৮৬ জন।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এক হাজার ২০৬ জন। ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এক হাজার ১১৯।
অন্যান্য বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন ৮৭ জন। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৭৫০ জন। তাদের মধ্যে ৪১৬ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়প্রাপ্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫০৯ জন।
পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে মারা গেছেন ৩৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরও নিশ্চিত করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়, মার্চে ১৩, এপ্রিলে তিন, মে ৪৩, জুনে ২৭২, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন।
শিশু হাসপাতালে রেকর্ড ভর্তি : গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ ৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ১৪টি শিশু আইসিইউতে ভর্তি আছে। জানা যায়, শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। চলতি মাসের ২১ দিনেই হাসপাতালটিতে শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে ২৩২ জন। শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাকিম জানান, গত জানুয়ারি থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত এখানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৫৪ জন। বর্তমানে এ হাসপাতালে ৮০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ৩৬ নম্বর বেডে আটদিন ধরে চিকিৎসাধীন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া মল্লিকা আকতার মলি নামের একশিশু। মল্লিকা রাজধানীর কল্যাণপুরের দোতলা মসজিদসংলগ্ন এলাকায় বাবা-মার সঙ্গে থাকে। তার মা নাজমা আকতার বলেন, চিকিৎসক বলেছেন মল্লিকার বর্তমান অবস্থা অনেকটাই ভালো। আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। তবে মেয়ে হাসপাতালে থাকতে চায় না, দ্রুত বাড়ি যেতে চায়।
ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে একদিনে সর্বোচ্চ ৮০ শিশু ভর্তি হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তবে এবার বাচ্চারা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাই অভিভাবকদের ডেঙ্গু বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। আগস্ট মাসে প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে দেখা যায়, দ্বিতীয় সপ্তাহে কিছুটা কম ছিল। তৃতীয় সপ্তাহে আবারো ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ