আজ ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও আওয়ামী লীগের তত্কালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন আরো অন্তত ৫০০ জন। আহতদের অনেকেই স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, তত্কালীন বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে সংগঠনের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় ঘাতক চক্র। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। আওয়ামী লীগ সভাপতি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কী ঘটেছিল সেদিন:
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ছিল শনিবার। বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যাওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে অস্থায়ী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বুলেট প্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ চেপে বিকাল ৫টার একটু আগে সমাবেশস্থলে পৌঁছেন বিরোধী দলের নেতা। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন।
বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে বক্তৃতা শেষ করে শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোতে থাকেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। ঠিক সে মুহূর্তেই শুরু হয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে ট্রাকে অবস্থানরত নেতারা ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। পরে ঘাতকরা শেখ হাসিনার গাড়িকে টার্গেট করে গুলি চালায়। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ।
২১ আগস্টের সেই রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। বাকিরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নারী নেত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান। এই বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন
সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন, ইসাহাক মিয়া প্রমুখ।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনার ১৪ বছর ১ মাস ২০ দিন পর রায় ঘোষণা করা হয়। মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক দুজন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জন ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চারজন পলাতক রয়েছেন।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামির মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৯ আসামির মধ্যে তারেক রহমান, কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, আনিসুল মোর্সালীন, মুহিবুল মুক্তাকীন, খলিলুর রহমান খলিল, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, ইকবাল, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, হারিছ চৌধুরী, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, দুই বছর করে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, তত্কালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান ও ডিএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান পলাতক রয়েছেন।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও আওয়ামী লীগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী: ২১ আগস্ট শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
সকাল সাড়ে ১০টায় ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা। সভাপতিত্ব করবেন : আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ