আগামী ২৮ ডিসেম্বরে উদ্বোধন হবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু হবে। মেট্রোরেল প্রকল্প শুরুতে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রাজধানীর মিরপুরবাসীকে। দিয়াবাড়ী-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের ১৬ স্টেশনের মধ্যে ৬টিই মিরপুরে। স্টেশন স্থাপন ও মেট্রোরেলের পিলার বসানো কাজ চলমান থাকায় যানজট আর ধুলায় নাকাল ছিলেন মিরপুরবাসী। তীব্র যানজটের মধ্যেও থেমে ছিল না তাদের যাত্রাপথ। ঘামছড়া শরীর নিয়েই জীবনযুদ্ধে ছিল তাদের জীবনযাপন। তবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য কিছুটা কষ্ট কমছে মিরপুরবাসীর। প্রাথমিকভবে সীমিত পরিসরে উত্তরা স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এ উড়াল ট্রেন। উদ্বোধনের দিনই এ দুটি স্টেশন খুলে দেয়া হবে। সে মোতাবেক সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। মেট্রোরেলের এ অংশের বাকি সাতটি স্টেশনও পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে খোলা হবে। তবে দিয়াবাড়ী-মতিঝিল পর্যন্ত পুরোদমে মেট্রোরেল চালু না হওয়ায় তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েও হলো না শেষ। নাজমুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। এক যুগ ধরে তিনি ঢাকার মিরপুর এলাকায় বসবাস করেন। ফুটপাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করে তার সংসার চলে। বছর কয়েক আগে ঢাকায় তার এক স্বজন মারা যান। তাকে দাফনের জন্য মিরপুর-১২ থেকে রওনা হয়েছিলেন আজিমপুর কবরস্থানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু, এই পথ যেতে তার সময় লেগেছিল তিন ঘণ্টা। ফলে সেই স্বজনের মুখ শেষবারের মতো দেখতে পারেননি। সেই আফসোস তাকে এখনো কষ্ট দেয়।
শুধু নাজমুল ইসলাম নন, তার মতো লাখ লাখ মিরপুরবাসীর কাছে কয়েক বছর আগেও পল্টন, প্রেসক্লাব ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়া ছিল ভয়াবহ এক ভোগান্তির নাম। কিন্তু, সেসব ভোগান্তি পেছনে ফেলে যানজটহীন মেট্রোরেলের উদ্বোধনে যাতায়াতের স্বপ্ন দেখছেন তারা। তারা মনে করছেন, মেট্রোরেল মিরপুরবাসীর জন্য বড় এক আশীর্বাদ হবে। সময় ও ভোগান্তি দুটোই বাঁচবে।
পল্লবীর বাসিন্দা ইসরাত জাহান বলেন, খুব ইচ্ছে ছিল মেয়েকে বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াব। মেয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও যানজট ও ভোগান্তির কারণে সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়ে ওঠেনি। এখন মেয়ে বড় হয়েছে। দেশে মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। পুরোদমে মেট্রোরেলে যাত্রাপথ শুরু হলে মেয়ে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পায়, তাহলে অল্প সময়েই বাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
শেওড়াপাড়া এলাকার সাবেক ব্যাংকার আজিজুল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেল যখন হচ্ছিল তখন অনেকে অনেক কথা বলেছেন। ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১০ যেতে ঘাম ছুটে যেত। অনেক আত্মীয়স্বজন ভয়ে বরিশাল থেকে আসতে চাইত না। আবার খুব জরুরি কাজে বের হলেও তা খুব সহজে শেষ করা যেত না। এমনও দিন গেছে সারা দিন পথেই কেটেছে। অবশেষে সেসব দিন শেষ হচ্ছে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা একমাত্র মিরপুরবাসীই বোঝেন। দিয়াবাড়ী-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের সবকয়টা স্টেশন চালু হলে নগরীতে যানজট থেকে মানুষ বিড়ম্বনা ছাড়া গন্তব্যে যাতায়াত করতে সক্ষম হবেন। লোকজন সহজে নিত্যদিনের কাজ সারতে পারবে। একই সঙ্গে বদলে যাবে মানুষের চিন্তাভাবনাও।
মোস্তাক আহমেদ নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে গত তিনটা বছর কি কষ্ট যে করেছি তা বলে বোঝানো যাবে না। অবশেষে কষ্টের দিন ঘনিয়ে আসছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বরে উদ্বোধন। পরদিন থেকে দুইটা স্টেশন চালু হবে। তবুও আমাদের সমস্যা নেই। উদ্বোধন যখন হচ্ছে তাহলে বাকি স্টেশনগুলোও ধাপে ধাপে চালু হবে। রাজধানীতে কষ্টও কমবে। সাধারণ মানুষের গন্তব্যে স্বাচ্ছদ্যে যাতায়াত করতে পারবে। অর্থনৈতিক নিয়ে রাজধানীবাসীর চিন্তা-চেতনাতেও নতুন নতুন পরিকল্পনা আসবে। যা বাস্তবায়ন করলে দেশের অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে।
উল্লেখ্য, আগামী বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সাধারণ যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ পাবেন পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ