ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিলিয়ন ডলার রফতানি ভারতে

প্রকাশনার সময়: ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৪

ভারতে রফতানি বাড়ছে। রেকর্ড গড়ে গত অর্থবছরে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রফতানি হয় ভারতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর পাশের এই দেশটিতে পণ্য রফতানির পালে নতুন করে হাওয়া লাগে। তাই প্রতি মাসেই বাড়ছে রফতানি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ভারতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছিলেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। আগস্টে তা বেড়ে ২২ কোটি ২৪ লাখ ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে ২৪ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রফতানি হয়েছে ১৭ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য। সবশেষ নভেম্বরে ভারতে পণ্য রফতানি থেকে ১৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ভারতে প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এই পাঁচ মাসে ভারতে ৪৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানির অঙ্ক ছিল ৩১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারতে পণ্য রফতানির এই ইতিবাচক ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন মাত্রা পেয়েছে। তার ফলেই রফতানি বেড়েছে। অর্থবছর শেষে এবার ভারতে রফতানি ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারের মাইলফলকে গিয়ে পৌঁছতে পারে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সম্প্রতি দেশভিত্তিক রফতানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ভারতে ৯৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে; যা আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ডলার। ওভেন পোশাক রফতানি থেকে এসেছে ২৫ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার ডলার।

নিট পোশাক থেকে এসেছে প্রায় ২২ কোটি ডলার। এ ছাড়া কটন ও কটন প্রোডাক্টস থেকে ১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, প্লাস্টিক দ্রব্য থেকে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার আয় হয়েছে।

গত দুই অর্থবছরে সব দেশেই বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারতে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে পোশাক রফতানি থেকে এসেছিল ৭২ কোটি ডলার (ওভেন ৪০ কোটি ও নিট ৩১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার)।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য রফতানি থেকে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার ডলার, প্লাস্টিকদ্রব্য থেকে ৩ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং কটন ও কটন প্রোডাক্টস থেকে ৪ কোটি ডলারের মতো আয় হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিনটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রফতানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে, তা-ও সেটা গত তিন বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রফতানি ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেন, যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এ আয় বেশি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।

২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দেয়। যদিও সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। ২০১১ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রফতানিতে ভাটা পড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরে পোশাকের নামিদামি বিদেশি অনেক ব্র্যান্ড বিক্রয়কেন্দ্র খোলায় তাতে পোশাক রফতানি বৃদ্ধি পায়।

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই কাছাকাছি উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে। আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবকাঠামোগত যোগাযোগের উন্নতিও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।’

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এ গবেষক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বর্তমানে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ যথাযথ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এ চুক্তি করলে ভারতে রফতানি আরও বাড়বে। একই সঙ্গে এ দেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে রফতানি হবে।’

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ