এবার দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ শপের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অর্ডার নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশান-১ এর সড়ক অবরোধ করেছেন ই-অরেঞ্জের গ্রাহকরা। সেখানে তারা স্লোগান দিয়ে মিছিল করছেন।
সোমবার বিকেলে তারা অবস্থান নেন। এ সময় সড়কে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
তবে ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষ বলছেন, লকডাউনের জন্য তারা হোম অফিস করছেন। তারা ডেলিভারি লিস্ট ১৬ তারিখ দিবেন এবং ১৭ তারিখ থেকে পন্য ডেলিভারি শুরু করবেন। আশ্বাস পাওয়ার পর গ্রাহকরা অফিস থেকে চলে আসেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গুলশান থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, ৪০/৫০ জন গ্রাহক মোটরসাইকেল নিয়ে এবং কয়েকশ গ্রাহক পায়ে হেটে গুলশান-২ মোড়ে আসেন। পরে তারা সেখান থেকে তারা গুলশান-১ এর দিকে চলে যান।
ই-অরেঞ্জ শপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা (এমপি)। আন্দোলনরত গ্রাহকরা জানিয়েছেন আমাদের গ্রাহকদের অধিকাংশই ইওরেঞ্জ এর ব্রান্ড এম্বাসেডর, সাবেক ক্রিকেটার ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজাকে দেখেই অর্ডার করেছিলাম। কাজেই এই দায় এড়াতে পারেননা তিনি। প্রয়োজনে তারা মাশরাফীর সাথেই যোগাযোগ করবেন বলেও জানান তারা।
গ্রাহকরা জানান স্বপ্ন ভাউচার, সামার ভাউচার নামে ডাবল টাকা ভাউচার বিক্রয় করেন ই-অরেঞ্জ শপ। স্বপ্ন ভাউচার নামে মাত্র প্রথম পর্যায় কিছু গ্রাহক ডেলিভারি পেলেও বেশির ভাগ গ্রাহকই পাননি। তবে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদেরকে জানিয়েছে তারা স্বপ্ন ভাউচার রিফান্ড করবেন। কিন্তু দীর্ঘ ২ মাস পার হয়ে গেলেও এখন কোন গ্রাহক স্বপ্ন ভাউচার রিফান্ড পাননি বলে জানান।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ই-অরেঞ্জ শপ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একের পর এক নোটিশ দিয়ে মুলা ঝুলিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি গ্রাহকদেরকে। চলতি বছরের ৪ জুলাই ই-কমার্সকে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন নীতিমালা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তারা নানান অজুহাত দেখিয়ে সামার ভাউচার ব্যালেন্স দিয়ে পণ্য অর্ডার করে পেমেন্ট করার অপশন বন্ধ করে দেয়।গ্রাহকরা তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট সমাধান চাইলে তারা জানান, আমরা এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠকে বসবো, ভাউচারের টাকা কি করবে সে বিষয়ে বৈঠক শেষে জানানো হবে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সামার ভাউচারের কোটি কোটি টাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি হোল্ড করে রেখেছে। নতুন নীতিমালা তার অপর লকডাউন চলাকালীন সময়ে ই-অরেঞ্জ শপ কোনো নোটিশ ছাড়া গোপনে তাদের মালিনা পরিবর্তন করেছে। গ্রাহকদের এ ব্যাপার কোন কিছু জানানো হইনি এবং তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কোন নোটিশ দেয়া হইনি।
কোন গ্রাহক প্রিন্সিপাল এমাউন্ট রিফান্ড নিতে চাইলে তাদেরকে ইমেল করে জানাতে অথবা কল সেন্টারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তবে রিফান্ড কত দিনের ভিতর দিবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেনি। একের পর এক নোটিশের মুলা ঝুলিয়ে গ্রাহকের টাকা নিয়ে প্রতারণা করার চেস্টা চালাছেন বলে মনে করছেন গ্রাহকরা। এখন গ্রাহকরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থাসহ প্রেস কনফারেন্স করবেন বলে জানান।
আজ ১৬ আগস্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে নোটিশ দেন তারা এখন বাইক ডেলিভারি করতে পারবেন না, বাইক ডেলিভারি দিতে তাদের আরো ৪৫-৬০ কার্যদিবস লাগবে।
এরপর গ্রাহকরা গুলশান থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর শাহানুর রহমানকে নিয়ে অফিস এলে ইওরেঞ্জ.শপের (সিটিও) ইওরেঞ্জ. শপের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লাইভ এ আসেন। এবং বলেন লকডাউনের জন্য তারা হোম অফিস করছেন। তারা ডেলিভারি লিস্ট ১৬ তারিখ দিবেন এবং ১৭ তারিখ থেকে পন্য ডেলিভারি শুরু করবেন। আশ্বাস পাওয়ার পর গ্রাহকরা অফিস থেকে চলে আসেন।
এর আগে ১১ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটিতে ভাঙচুর এবং লুটপাটের চেষ্টা চালায় বলেও অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি।
১১ আগস্ট ই-অরেঞ্জের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৫০ জন গ্রাহক বিক্ষোভে অংশ নেন। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
সরকারি আদেশ অনুযায়ী লকডাউন শিথিল হওয়ায় ১১ আগস্ট থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় খোলার অনুমতি থাকলেও ই-অরেঞ্জের গুলশান কার্যালয়ের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ