ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশেষ অভিযানেও অধরা দুই জঙ্গি

প্রকাশনার সময়: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৩৯

এক মাস হতে চললেও ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেয়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মো. মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এই সময়ে বিএনপির ২৭শ’ নেতাকর্মী ও কিছু মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেফতার করা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী বা চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। যদিও ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিকে দ্রুতই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা।

এদিকে বিএনপির দাবি, বিশেষ অভিযানে মূলত বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে চালানো হয়েছিল। ওই অভিযানে সারাদেশে তাদের ২৭শ’র বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সমাবেশের আগের দিন গ্রেফতার করা হয় ১ হাজার জনকে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইডি মিডিয়া মনজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহসান বলেন, বিশেষ অভিযানের প্রাপ্তি সম্পর্কে পরে অবহিত করা হবে।

জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টরের ডিসি মো. ফারুক হোসেন জানান, আইজিপির নির্দেশে দেশব্যাপী গত ১ ডিসেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়ে তা ১৬ তারিখ শেষ হয়। ওই অভিযানে ডিএমপিও অংশ নেয়। এর অংশ হিসেবে ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় অন্তত ১ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পেশাদার অপরাধী ও মাদক কারবারিও রয়েছেন। অনেকের ধারণা ছিল, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। মূলত বিশেষ অভিযান চালানো হয় ওয়ারেন্টের আসামি, পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি ও জঙ্গিবাদ দমনে। মাঝে-মধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়। বলতে গেলে এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালত থেকে ছিনিয়ে নেয়া দুই আসামিকে গ্রেফতারে কাজ করছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দারা। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা গ্রেফতার হবে। তবে তারা যদি বিদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিদেশ পালানো বিষয়ে কোনো ধরনের কোনো গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের অবস্থান এবং কোন রুট ধরে তারা পালিয়েছেন সে বিষয়ে এখনও অন্ধকারে গোয়েন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টা মাঠে রয়েছে র‍্যাব-পুলিশের একাধিক ইউনিট। তাদের ধারণা খুব শিগগিরই জঙ্গিরা গ্রেফতার হবে। কারণ পুরান ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা ধরে দ্রুত সময়ে তাদের ঢাকা ছাড়া সম্ভব নয়। ওই ঘটনার সমন্বয়ক হিসাবে মেহেদী হাসান অমি নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দুই দফায় ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে অমি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের। ওই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বরখাস্ত মেজর জিয়া নাম সামনে এসেছে। এমন পরিস্থিতে জিয়াসহ ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি এখন গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওদিকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অন্যতম আসামি ইদি আমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৪ দিনের রিমান্ডে আনা হয়। ঘটনার দিন সে একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। তবে রিমান্ডে তার কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, গত ২০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে শুনানি শেষে প্রিজনভ্যানে তোলার ঠিক আগ মুর্হূতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মো. মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নেন তার সহযোগী জঙ্গিরা। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় ১৩১ নম্বর জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পুলিশ সদর দফতর। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশাল ইউনিট। তদন্তের এক পর্যায়ে ছিনিয়ে জঙ্গি নেয়ার সমন্বয়ক হিসেবে অমিকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রিমান্ডে অমির কাছ থেকে মূলত অর্থ ও শেল্টার দাতাদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে তার দেয়া তথ্যমতে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২০ জনের নামের তালিকা রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। এরমধ্যে অনেকের অবস্থান দেশের বাইরে।

সূত্রমতে, কাটআউট পদ্ধতিতে চলা জঙ্গিদের নাম ছাড়া কোনো তথ্যই দিতে পারেনি অমি। তার দেয়া নামগুলো সাংকেতিক ছিল বলে গোয়েন্দা নিশ্চিত হয়েছে। এরপর প্রকৃত অর্থদাতাদের তালিকা পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। জামিন নিয়ে লাপাত্তা থাকা জঙ্গিরাই এখন নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। তারা আরও বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পলাতক জঙ্গিরা তাদের সহযোগীদের ডেরায় পৌঁছে গেছেন। তবে তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে এখনও আশাবাদী র‍্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, সম্প্রতি যেসব জঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছে তাদের আমরা গ্রেফতার করেছি। আরও বেশ কয়েক জঙ্গি র‍্যাবের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছি। এই মুহূর্তে র‍্যাবের গোয়েন্দা তথ্যমতে, জঙ্গিদের আক্রমণাত্মক হওয়ার সামর্থ্য নেই। তিনি জানান, র‍্যাব বহুমুখী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রমে কাজ করছে। যখনই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে, তখনই গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু অভিযান নয়, জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গড়তে র‍্যাব ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ